প্রকাশিত: Wed, Mar 15, 2023 2:13 PM
আপডেট: Thu, Jun 26, 2025 3:14 AM

নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের তৎপরতা এবং প্রধানমন্ত্রীর অনমনীয় দৃঢ়তা

জিল্লুর রহমান : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাকে ‘কোনো চাপে টলানো যাবে না’। গত সোমবার বিকালে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘সংসদ নির্বাচন ২০২৩ কেন্দ্রিক বিদেশি কূটনীতিকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে, কোনো চাপ আছে কি না’Ñ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। গত ১২ মার্চ ছিলো কূটনৈতিকদের সঙ্গে বিএনপির মিটিং, তারা কূটনীতিকদের বলেছে, এই সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবে না। শুধু এই কথা বলার জন্যে আয়োজন করে মিটিং করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কূটনীতিকরা আসলে কী চাচ্ছেন? এর উত্তর খোঁজার আগে দেখে নিই কেন সরকারপ্রধান ‘কোনো চাপে কাজ হবে না’ বলে দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন। ঠিক একদিন আগেই কূটনৈতিকদের সঙ্গে বিএনপির মিটিং হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে নিশ্চয়ই বিএনপির সঙ্গে কূটনৈতিকদের মিটিংয়ের কোনো একটা যোগসূত্র আছে। ক্রমাগত  চাপে থেকে চাপ থেকে বের হয়ে আসা সবার পক্ষে সম্ভব নয়, বাংলাদেশের অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস তাই বলে। 

কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ‘কোনো চাপে টলানো যাবে না’Ñ প্রধানমন্ত্রীর এই দৃঢ়তার পেছনে কি কোনো গোপন সূত্র কাজ করছে? যেখানে অতীতে অনেক সরকার প্রধানই চাপ সামলে উঠতে পারেননি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথম ট্র্যাজেডি হলো বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড, যে অপশক্তিগুলো এর পেছনে কাজ করেছে, তারা নিঃসন্দেহে দেশের ভেতরে থাকা বঙ্গবন্ধুর শত্রুদের ব্যবহার করতে পেরেছে সাফল্যজনকভাবে। মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডেও এই চাপ দেওয়া শক্তিগুলো দেশের ভেতরে থাকা অপশক্তিগুলোকে ব্যবহার করেছে। এই দুই নেতা প্রকৃত অর্থে চাপ সামলে নিতে পারেননি, নিজস্ব লোকদের বিশ্বাসঘাতকার কারণে এবং বিশ্বস্ত লোকদের অভাবে। আলোচিত এক এগারোও এসেছে কারও না কারও সহযোগিতায়, মূল কথা যেকোনো সরকারের বিপক্ষে চাপ তখনি কার্যকর হয়, যখন এর পেছনে সরকারবিরোধী শক্তিগুলো সক্রিয় থাকে এবং সরকার পরিবর্তনের পরবর্তী অবস্থা সামাল দেওয়ার মতো নির্ভার হয়। 

কিন্তু বর্তমানে এমন কোনো শক্তি মাঠে দেখা যাচ্ছে না, যারা এই চাপ ক্রিয়েট করা শক্তিগুলোর সহযোগী হতে পারে, তাই কোনো চাপই আসলে কাজ করছে না। বিদেশিরা তো আর রাজপথে আন্দোলন করতে পারবেন না। বর্তমান সরকারের জন্যে আরেকটি বড় প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে প্রশাসন, যারা আওয়ামী লীগ চলে যেতে চাইলেও পেছন থেকে ধরে রাখবে। যে কেউ নিশ্চিত থাকতে পারেন বর্তমান প্রশাসন যেভাবে আছে, সেভাবে মির্জা ফখরুল সাহেবকে সিইসি বানালেও আকাক্সিক্ষত সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবেন না। 

সরকারের চাপ ছাপিয়ে যাওয়ায় গোপন সূত্র বা মূলমন্ত্র এটাই। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারেন, কোনো চাপে টলানো যাবে না। আর কূটনৈতিকরা আসলে কী চাচ্ছেন? তারা কি বিএনপির উপরে নির্ভার? বিদেশিদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি নির্ভার শক্তি নয়, এটি কূটনীতিকরা জানে, আওয়ামী লীগ তো অবশ্যই জানে। বিদেশিরা সরকার পরিবর্তনের চেয়েও নিজেদের এজেন্ডা নিয়ে বেশি ভাবেন, এজেন্ডা যদি জামায়াতে ইসলামিকে দিয়ে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়, তবে তারা তাদেরই ক্ষমতায় আনতে চাইবেন। লেখক: সাংবাদিক